পাটের প্রকার ভেদ
পাট এক প্রকার উদ্ভিদের ছাল হতে প্রাপ্ত তন্তু
(Fiber)।পাট সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের প্রাকৃতিক ফাইবার গুলোর মধ্যে একটি।পাটের দীর্ঘ,চকচকে
সোনালী রংয়ের আশঁ সহজে পাক দিয়ে শক্তিশালী সূতা (thread) তৈরী করা যায়।পাটের
সোনালী রং ও ভাল গুনাগুনের কারণে একে সোনালী আশঁ বলা হয়।
পাট সাধারণত দুই প্রকার। যথা:
১) সাদা (Whitejute) বা তিতা পাট (বৈজ্ঞানিক নাম Corchorus capsularis )
২) তোষা (Tossa jute) বা মিঠা পাট (বৈজ্ঞানিক নাম Corchorus olitorius)
এছাড়া আরো একটি উদ্ভিদ হতে
পাটের মত তন্তু পাওয়া যায় যার নাম মেস্তা (বৈজ্ঞানিক নাম Hibiscus Cannabinus) । কিছু
কিছু দেশে যেখানে পাটের চাষ নেই সেখানে পাটের বিকল্প হিসাবে কেনাফ নামে এক প্রকার উদ্ভিদের
আশঁ ব্যবহার করা হয়।
অঞ্চল ভিত্তিক পাটের মান (শুধু মাত্র বাংলাদেশের
জন্য)
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি ও পানির
গুনাগুণ, আবহাওয়া ইত্যাদি প্রাকৃতিক কারণে পাটের আঁশের মানের তারতম্যের জন্য পাটকে
অঞ্চলভিত্তিক পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১। জাত পাট: বৃহত্তর
ঢাকা,ময়মনসিংহ,জামালপুর,টাঙ্গাইল ও কুমিল্লা জেলায় উৎপাদিত পাট জাত পাটের অন্তর্গত।এই
অঞ্চলে উৎপাদিত সাদা ও তোষা উভয় পাটের আঁশ খুবই শক্ত হয়।পাটের উজ্জ্বলতা ও তৈলক্ততা
অধিক থাকে।পাটে কাটিংস্ এর পরিমান কম থাকে।তোষা পাট উজ্জ্বল শ্যামলা বা সাদা রঙয়ের
হয়ে থাকে।
২। হার্ড ডিস্ট্রিক্ট
পাট: বৃহত্তর ফরিদপুর জেলায় উৎপাদিত পাট হার্ড ডিস্ট্রিক্ট পাটের অন্তর্গত।হার্ড ডিস্ট্রিক্ট
পাট জাত পাটের তুলোনায় কিছুটা কম সূক্ষ তবে একই শক্তি সম্পন্ন।এই এলাকায় তোষা পাট বেশী
চাষ হয়।পাটের উজ্জ্বলতা ও তৈলাক্ততা অধিক থাকে।তৈলাক্ত তোষা পাট উজ্জ্বল কাঁচা সোনা
বর্ণের।তালমা,পুকুরিয়া,কানাইপুর,খলিলপুর,খানখানাপুর,চরমুগুরিয়া ও টেকেরহাট এলাকা এই
পাটের জন্য প্রসিদ্ধ।
৩। ডিস্ট্রিক্ট পাট: ব্রহ্মপুত্র
নদের পশ্চিম পাড়ের অঞ্চল,মূলত বৃহত্তর পাবনা জেলায় উৎপাদিত পাট ডিস্ট্রিক্ট পাটের অন্তর্গত।এছাড়া
সিলেট,নোয়াখালী,পার্বত্য অঞ্চলে উৎপাদিত পাট ডিস্ট্রিক্ট পাট হিসাবে ধরা হয়। আঁশ কিছুটা
মোটা,উজ্জ্বলতা ও তৈলাক্ততা কিছুটা কম থাকে।তবে আঁশের শক্তি জাত পাটের মত।পাটে কাটিংস্
এর পরিমান কম থাকে।সাদা পাটের রঙ সাদাটে,তোষা পাটের রঙ বাদামী বা ফ্যাকাশে লাল হয়ে
থাকে।
৪। সফ্ট ডিস্ট্রিক্ট
পাট: বৃহত্তর কুষ্টিয়া,যশোর,খুলনা,বরিশাল এলাকায় উৎপাদিত পাট সফ্ট ডিস্ট্রিক্ট পাটের
অন্তর্গত।আঁশ অপেক্ষাকৃত মোটা ও নরম,তৈলাক্ততা ও উজ্জ্বলতা কম এবং কাটিংস্ অধিক থাকে।
৫। নর্দান পাট: বৃহত্তর
রাজশাহী,দিনাজপুর,রংপুর,বগুড়া এলাকায় উৎপাদিত পাট নর্দান পাটের অন্তর্গত।আঁশ অপেক্ষাকৃত
মোটা,তৈলাক্ততা ও উজ্জ্বলতা কম এবং কাটিংস্ অধিক থাকে।
তবে একই এলাকায় কিছু কিছু স্থানে ভিন্নধর্মী পাট
উৎপন্ন হয়।যেমন বিক্রমপুর জাত এলাকা হলেও তালতলা ও সিরাজদিখান মোকামের পাট ডিস্ট্রিক্টধর্মী,আবার
কুড়িগ্রাম নর্দান এলাকা হলেও উলিপুর মোকামের পাট জাত পাটের সমতুল্য। এ ধরনের কিছু ব্যতিক্রম
পাওয়া যায়।
Comments
Post a Comment