পাট আঁশের ত্রুটি সমূহ:
চাষ হতে বাজারজাতকরণ
পর্যন্ত পাট আঁশে বেশ কিছু দোষ ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়। যেমন-
(১) স্পিকি/ চোখ
দোষ/ গিটজনিত ত্রুটি: যাচাইকালে পাটের মধ্যে দেখা যায় বেশ কিছু স্থানে ছোট ছোট কালো
শক্ত ছালযুক্ত গিট । এই ত্রুটিকে স্পিকি বা চোখ বা গিট দোষ বলে ।পাটচাষ কালে পোকার আক্রমণে কোন কোন স্থানে ছিদ্র তৈরী হলে অথবা
পাট গাছের সাথে ছোট ছোট যে ডাল পালা থাকে তা থেকে ছিদ্র তৈরী হয়। ঐ সমস্ত ছিদ্রই পরবর্তীতে
শক্ত কলো গিট-গিট আকারে পাটের আঁশে থেকে যায়।যাচাই কালে সকল গুণ থাকা সত্ত্বেও এই পাট
ক্রস বটম মানের উপরে নেয়া যায় না ।
(২) বার্কি বা ছাল
জনিত ত্রুটি: পাট আঁশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় কালো ছাল বা দাগ দেখা যায়। এটাই বার্কি
বা ছাল জনিত ত্রুটি। চাষ পর্যায়ে গাছে গাছে ঘর্ষণ, পোকার আক্রমণ বা শিলা বৃষ্টির কারণে
এই ত্রুটি তৈরী হয়।
(৩) গামি/ গামি
টপ/ ডগ করা (ক্রপি জুট) : পাট জাগ দেয়ার সময় অগ্রভাগ পানির উপরে ভেসে থাকলে ঠিকমত পঁচন
হয় না। তখন আঁশের অগ্রভাগ শক্ত হয়ে থাকে। এই ধরনের ত্রুটিযুক্ত পাট উচ্চমানে নেয়া যায়
না। হালকা শক্ত জড়ানো আগাযুক্ত (আগায় লাল করা) পাটকে গামি টপ এবং কালো ও শক্ত আগা যুক্ত
পাটকে ক্রপি জুট বা ডগ করা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
(৪) রানার (টানা)/
হুঙকা (মরা ছাল): চাষ পর্যায়ে কিছু কিছু পাট গাছ মরে যায় বা অর্ধেক অংশ ভেঙ্গে মরা
অবস্থায় থাকে। ঐ পাটগুলো জাগ দেয়ার পর ভাল পাটের সাথে মিশ্রিত থাকে। অর্ধমরা কালো শক্ত
পাট গুলোকে সর্বনিম্ন গ্রেডের SMR হিসেবে এবং পুরোপুরি মরা শক্ত শুকনা ছালগুলোর কোন আঁশ হয় না
বলে হুঙকা হিসেবে পরিত্যক্ত হয়।
(৫) রূটি জুট বা
গোড়াময় পাট: পাট জাগ দেয়ার সময় গোড়া পানির উপরে ভেসে থাকলে বা পানি কমে গেলে ভালভাবে
জাগ না হওয়ায় বা পঁচন না হওয়ায় গোড়ায় ছাল থাকে। তাকে রূটি জুট বলে।
(৬) আঁশের শক্তিজনিত
ত্রুটি (আঁশ ফাটা/আঁশ মরা/আঁশ পঁচা/আঁশ মোটা): উজ্জ্বলতা, শক্তি, তৈলাক্তা পাটের ভালো
গুনাগুন।কিছু কিছু পাটের আঁশে ঐ সমস্ত গুনাবলী খুবই কম থাকে । আঁশ দেখতে ফ্যাকাশে ও
ঘোলাটে। আঁশ খুবই দুর্বল ও ফাটা-ফাটা মনে হয়। জাগ দেয়ার সময় অধিক পঁচনে ,শুকানোয় বিলম্ব
হওয়া বা মজুদ কালে অধিক আর্দ্রতা থাকলে এই ধরণের ত্রুটি হয। আঁশ ফাটা বা আঁশ মরা পাট
দিয়ে পরবর্তীতে ভালো উৎপাদন দেয়া সম্ভব হয়না বলে ,এই পাটকে নিম্ন গ্রেডের (এসএমআর
বা হাবিজাবি) পাট হিসাবে ব্যবহার করা হয় ।কিন্তু আঁশ পঁচা পাট কোন ভাবে ব্যবহার করা
যায় না । একে হার্ট ড্যামেজ পাট বলে।
আঁশমোটা পাট: কোন
কোন অঞ্চলের পাট বা ভারতীয় বীজের পাটের আঁশ এবং কোষা বেশ মোটা হয়। ঐ সকল পাট দ্বারা
ভালো উৎপাদন দেয়া যায় না বলে নিম্ন গ্রেড হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
(৭) মাঝ ছাল: চাষ
পর্যায় বন্যা বা জলাবদ্ধতার কারণে হঠাৎ পানি বেড়ে বেশ কিছু দিন অবস্থান করলে পাটের
গোড়ার দিকে বেশকিছু অংশ জুড়ে (পানিতে ডুবে থাকা অংশ) শক্ত হয়ে যায়, যা জাগ দেয়ার পর
কালো ছাল হয়ে আঁশে থেকে যায়। একে মাঝছাল ত্রুটি
বলে ।
(৮) জল দাগ বা বদ
রং: পাট কাঠি হতে পাট ছাড়ানোর পর ভালো ভাবে না ছড়িয়ে শুকাতে দেরি হলে বা পাট ভালো ভাবে
না শুকালে পাটের গায়ে ব্যতিক্রম ছাপ দেয়ার মত হালকা হলুদ, বাদামী, মাটি রং ফ্যাকাশে
ইত্যাদি দাগ পরিলক্ষিত হয়। এটাকে জল দাগ বলে ।এছাড়া নোংড়া পানিতে বার বার পাট পঁচালে
, পাটের জাগে কলা গাছ,কচুড়িপানা,গাছের গুড়ি দিয়ে চাপা দেয়ায় ঐ সমস্ত বস্তু হতে রস বা
কস নির্গত হয়ে পাটের রং নষ্ট করে দেয় একে বদ রং বলে ।
(৯) আগাফাটা ও পাটকাঠি
জনিত ত্রুটি: চাষ পর্যায় শিলা বৃষ্টি ,পোকার আক্রমণ ইত্যাদি কারণে পাট গাছের অগ্রভাগ
ক্ষতিগ্রস্থ হলে,অগ্রভাগে বেশ কিছু ডালপালা জন্মায় । পরবর্তীতে আঁশ ছাড়ানোর সময় পাটের
আগার পাটগুলো ছিড়ে যায় বা জড়িয়ে যায় ও পাটকাঠির ছোট ছোট অংশ পাটের সাথে থেকে যায়। এ
ছাড়া কোন কোন অঞ্চলে আঁশ ছাড়ানোর সময় নীচের অংশ পিটিয়ে ভেঙ্গে ফেলা হয়। ফলে পাটকাঠির
ছোট ছোট অংশ আঁশের সাথে থেকে যায়।পরবর্তীতে উক্ত পাট উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যহত করে বলে
এই পাট নিম্ন গ্রেড হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
(১০) বালাদোষ: পাটের
মধ্যে অধিক শিকড় থাকলে তাকে বালাদোষ বলে।
Comments
Post a Comment